অটোমান সাম্রাজ্য মুসলমানদের স্বর্ণালি ইতিহাসের এক বর্ণালি নাম। উসমানি খেলাফত নামেই মূলত পরিচিত এই শাসনকাল। যে নাম শোনার সাথে সাথে আনন্দে নেচে ওঠে প্রাণ। ঝলমল করে ওঠে হৃদয়ের উঠোন। চোখ মুদলেই দেখা যায় নিকোপোলিসের ময়দানে বায়েজিদ ইলদারামের মুগুরের আঘাতে ভেড়া-বকরির ন্যায় পলায়নপর ক্রুসেডারদের নাজেহাল দৃশ্য। ভেসে ওঠে সুলায়মান কানুনি কর্তৃক ভিয়েনার দ্বারে করাঘাতের ছবি। বুক ফুলে ওঠে যখন দেখা যায় প্রিভিজার কাছে একা খাইরুদ্দিন বারবারুসা ইউরোপের চারশতাধিক যুদ্ধজাহাজের বহরকে খাওয়াচ্ছেন নাকানি-চুবানি। আনমনা হয়ে যেতে হয় যখন আলোঝলমল সে হৃদয়-উঠোনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের অনন্য কৃতিত্ব, যিনি বাস্তবায়ন করেছিলেন প্রিয়নবির ভবিষ্যদ্বাণী-সংক্রান্ত মুজিজা। চোখের সামনে ফুটে ওঠে পাহাড়ি বন্ধুর পথে পুরো নৌবহর টেনে নেওয়ার অতিলৌকিক দৃশ্য। গোল্ডেনহর্নে রাজহাঁসের মতো ভেসে বেড়ানো উসমানি নৌবহর। হাজার বছরের অজেয় দুর্গনগরী কনস্টান্টিনোপলের পতনের ছবি। দুর্ধর্ষ জেনেসারি বাহিনীর তুলনাহীন বীরত্ব।
সেই স্বর্ণালি ইতিহাসের উজ্জ্বল এক টুকরোর দ্যূতি তুলে ধরা হয়েছে সুলতান দ্য গ্রেট মুহাম্মাদ আল ফাতিহ নামক এই গ্রন্থে। এই আশায় যে, জাতির যুবশ্রেণি জেগে উঠুক। অনুধাবন করুক আমরা কী ছিলাম আর কী হয়েছি। এরপর তারা তাদের কর্তব্য নির্ধারণ করুক।
‘কালান্তর প্রকাশনী’ ঐতিহাসিক দায়মুক্তি এবং ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই প্রকাশ করে চলছে মুসলিম উম্মাহর হারিয়ে যাওয়া গৌরবময় ইতিহাস। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের প্রকাশনা ড. শায়খ আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির ‘সুলতান দ্য গ্রেট মুহাম্মাদ আল ফাতিহ’।
সুলতান দ্য গ্রেট মুহাম্মাদ আল ফাতিহ
লেখক | : | |
---|---|---|
অনুবাদক | : | আবদুর রশীদ তারাপাশী |
প্রকাশক | : | কালান্তর প্রকাশনী |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | : | ২৪৮ |
প্রচ্ছদ | : | নাঈমা তামান্না |
কোয়ালিটি | : | হার্ডবোর্ড বাধাই, ৮০ অফহোয়াইট পেপার |
ISBN | : | 978 984 90473 3 9 |
ভাষা | : | বাংলা |
দেশ | : | বাংলাদেশ |
রেটিং | : |
লেখক | : | |
---|---|---|
অনুবাদক | : | আবদুর রশীদ তারাপাশী |
প্রকাশক | : | কালান্তর প্রকাশনী |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | : | ২৪৮ |
প্রচ্ছদ | : | নাঈমা তামান্না |
কোয়ালিটি | : | হার্ডবোর্ড বাধাই, ৮০ অফহোয়াইট পেপার |
ISBN | : | 978 984 90473 3 9 |
ভাষা | : | বাংলা |
দেশ | : | বাংলাদেশ |
রেটিং | : |
Mohammad Rakibul Islam –
ইতিহাস হলো আয়নার মতো।আমরা আয়না দেখে যেমন নিজেদের গুছিয়ে নিই ঠিক সেইভাবে ইতিহাসের আয়নায় চোখ বুলিয়ে দেখে নিতে পারি আমাদের সোনালি অতীত।এবং সেইসাথে অতীতে করা ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে গড়ে তুলতে পারি একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ। ইতিহাস পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস বিশেষ করে ইসলামি ইতিহাস।ডা.আলি মুহাম্মদ সাল্লাবী।ইতিহাস প্রেমিদের মধ্যে এক পরিচিত নাম।তার বইগুলো রেফারেন্স সহকারে থাকে ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।সেই ধারা থেকে বাদ পড়েনি এই বইটিও।বক্ষমান বইটি তার উসমানি খিলাফতের ইতিহাস বইয়েরই একটি অংশ।গুরুত্ব বিবেচনায় এটি আলাদা একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশ করেন।
বইটিতে বিদ্যমান রয়েছে সুলতান মুহাম্মদ থেকে “সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ’ হয়ে উঠার ইতিহাস। এতে বিদ্যমান রয়েছে এমন একটি দূর্গ জয়ের যার ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন রাসূল (সাঃ)।সুলতানের বিচক্ষণতা,তার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে এই গ্রন্থে। তার বিচক্ষণতার উদাহরনস্বরুপ একটি ঘটনা হলো,বসফরাস বন্দর থেকে গোল্ডেনহর্নে জাহাজগুলো স্থলপথে নিয়ে যাওয়াার সিদ্ধান্ত।যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনি তার বিচক্ষণতার প্রমান দিয়েছেন।যেটা বিজয় করার গৌরব অর্জনের জন্য প্রচেষ্ঠা চালিয়ে গেছেন অনেক বীরেরা
সেই দূর্গ কনস্টান্টিনোপল জয় করে মহাসম্মানের অধিকারী হয়েছেন সুলতান মুহাম্মদ।নিজের নামের পিছনে অর্জন করে নিয়েছেন “আল ফাতিহ’ তথা বিজয়ী উপাধি। কেয়ামত পর্যন্ত যা থাকবে তার নামের সাথে সংশ্লিষ্ট। বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে একজন শাসকের,একজন যোদ্ধার গুণবালি কেমন হওয়া উচিত।সাথে তুলে ধরা হয়েছে একজন আলেমের ভুমিকা।শায়খ আক শামসুদ্দিন (রহ)।যিনি ছোট থেকে সুলতানের মনে বিশ্বাসের বীজ বপন করেছেন যে তিনিই হবেন রাসুলের (সাঃ) ভবিষ্যৎবাণীকৃত সেই মহাবীর।সেভাবে শরিয়তের দীক্ষা দিয়ে গড়ে তুলেছেন সুলতানকে।সুলতানকে দিয়েছেন সঠিক পরামর্শ।বলা হয়,শায়খ আক শামসুদ্দিন হলেন কনস্টান্টিনোপলের আধ্যাত্মিক বিজেতা।কনস্টান্টিনোপল বিজয়ে তার অবদান সম্পর্কে বক্ষমাণ গ্রন্থে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।ঘটনাটি হলো, “একদিন সুলতান শায়খের তাবুতে জনৈক লোককে পাঠালে শায়খের খাদেম তাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি যার ফলে সুলতান নিজে যান সেখানে।সুলতানকেও শায়খের খাদেম ভিতরে যেতে দেননি কেননা শায়খের বারণ ছিলো কেউ যেনো তার তাবুতে না ঢুকে।সুলতান তখন খঞ্জর দিয়ে তাবু ছিড়ে দেখতে পান শায়খ সিজদাবনত রয়েছেন।তার পাগড়ি খসে পড়েছিল তার সাদা চুল দাড়ি থেকে খসে পড়ছিলো নুরানি প্রভা।শায়খ সিজদা থেকে উঠলে সুলতান দেখতে পান শায়খের চোখে অশ্রুর বিন্দু চমকাচ্ছিলো উজ্জ্বল মূতির ন্যায়।তারপর সুলতান যখন তার তাবুতে ফিরে আসেন দেখতে পান কনস্টান্টিনোপলের প্রাচীরগায়ে বিশাল ফাটল ধরেছে এবং সেই ফাটল দিয়ে শহরে ঢুকে পড়ছে মুসলিম বাহিনী।তখন তিনি আনন্দিত হয়ে বলেন,”আমি শহর বিজয়ের দরুন যতটা-না আনন্দিত,তারচেয়ে বেশি আনন্দিত এ জন্য যে,আমার যুগেও রয়েছে অসীম বরকতময় ব্যাক্তিগণ’।’সুবহানাল্লাহ শায়খের মতো আলেমের কারনে সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ’র মতো বীরেরা গড়ে উঠে।আজকের দিনে হয়তো শায়খের মতো আলেমের অভাবের ফলে সুলতানের মতো ব্যাক্তিদের গড়ে উঠা হয়না মুসলমানরা নিমজ্জিত হয় অন্ধকারের গভীর গহবরে।জুলুম নির্যাতনের শিকার হয় কুফফারদের থেকে।শায়খের মতো আলেমের অভাবে আজ মুসলমানরা সিরিয়া,আফগান,আরাকান,উইঘুর,হিন্দুস্তানে নির্যাতনের শিকার হলেও কেউ তাদেরকে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য এগিয়ে আসেনা।
আমাদের আজকের দিনে একজন শায়খ আক শামসুদ্দিনের ভীষণ প্রয়োজন যিনি তার ঈমানের বলে গড়ে তুলবেন সুলতান আল ফাতিহ’র মতো ব্যাক্তিদের।যে মুসলমানদের বাচাবে নির্যাতন,জুলুমের হাত থেকে।ফিরিয়ে আনবে উম্মাহর সেই হারিয়ে যাওয়া সোনালি অতীত।
MD. SAIDUL ISLAM –
“মুসলিম উম্মার সোনালি অতীত ও একজন মহান সুলতান”
কনস্টান্টিনোপল পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর একটি। বাইজেন্টাইন সম্রাট প্রথম কনস্টান্টিনের হাতে ৩৩০ খ্রিস্টাব্দে এই শহরের গোড়াপত্তন ঘটে। গোটা বিশ্বে ছিল এর বিরল বৈশিষ্ট্যমন্ডিত একটি অবস্থান। মুসলমানরা যখন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে জিহাদে লিপ্ত হয়, তখন ওই লড়াইসমূহে শহরটির ছিল আলাদা এক ভূমিকা। এই কনস্টান্টিনোপল বিজয়ীর ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহর রাসুল সা. প্রশংসা করে গেছেন। তিনি বলেছেন-
‘তোমরা (মুসলিমরা) অবশ্যই কনস্টান্টিনোপল বিজয় করবে। কতই না অপূর্ব হবে সেই বিজয়ী সেনাপতি, কতোই না অপূর্ব হবে তার সেনাবাহিনী।’ (মুসনাদে আহমদ ৪/৩৩৫)
ফলে ৮০০ বছরেরও বেশি সময় যাবত কনস্টান্টিনোপল বিজয় ছিল মুসলিম সেনাপতিদের কাছে একটি স্বপ্ন। বিশিষ্ট সাহাবী মুয়াবিয়া রা.-এর যুগ থেকে অনেকেই কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের চেষ্টা করে ছিলেন।
রাসুল সা.-এর সেই ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবায়ন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন ‘সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ’। তিনি ছিলেন অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের সন্তান।
মুহাম্মাদ আল ফাতিহ ছিলেন একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মুসলমান। যিনি ইসলামী শরীয়তের বিধানকে যথাযত ভাবে মেনে চলতেন। মুহাম্মাদ আল-ফাতিহ তার ধারাবাহিক পরিশ্রম ও সুগঠিত পরিকল্পনার মাধ্যমে তার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি সেই অপরাজেয় দুর্গশহর জয় করেছিলেন অকল্পনীয় সামরিক কৌশলে। সেনাবাহিনীকে গড়ে তুলেছিলেন অবর্ণনীয় যোগ্যতায়। তাঁর নির্দেশে সেনারা পাহাড়ি অসমতল রাস্তায় কাঠের উপর দিয়ে টেনে নিয়ে গিয়েছিল আস্ত একটা নৌবহর আর তা বাইজেন্টাইনদের কল্পনার বাইরে তাদের পেছনের দিকে নামিয়ে দিয়েছিল। এতেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল রোমানদের নৌশক্তি। সেই সাহসী পদক্ষেপে রোমানদের লাঞ্ছনাকর পরাজয় ঘটে। বিজিত হয়েছিল অপরাজেয় হিসেবে খ্যাত কনস্টান্টিনোপল। তিনি ব্যক্তিগত সম্পদ রাজকোষে জমা দিয়ে অনেক খ্রিস্টানদের মুক্ত করে দিয়েছিলেন। অথচ তার বিরুদ্ধে অনেক ইংরেজ ইতিহাসবিদ মিথ্যা অপবাদ দেয়।
একটা সময় পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে বেড়ানো মুসলিম জাতি নিজেদের অতীত ভুলে আজ হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে; নিজেদের অস্তিত্বই যেন ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমান এই সময়ে মুসলিম জাতির এই বেহাল দশার একমাত্র কারন হল, আমরা আমাদের সোনালি অতীত ভুলে গেছি। মিথ্যা ইতিহাস দিয়ে আমাদের মহান নেতাদের জীবন ইতিহাসকে প্রতিনিয়ত কলঙ্কিত করা হচ্ছে। আর আমরা আমাদের নিজেদের সত্য ইতিহাস ভুলে সেই মিথ্যাকে সত্য ভেবে হীনমন্যতায় ভুগছি। এই সুযোগে পশ্চিমারা কেড়ে নিচ্ছে আমাদের সবকিছু।
মহান এই সুলতানের জীবনী নিয়ে ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি রচিত বইয়ের বাংলা অনুবাদ গ্রন্থ ‘কনস্টান্টিনোপল বিজেতা সুলতান দ্য গ্রেট মুহাম্মাদ আল ফাতিহ’। লিখক বইটিকে মূলত তিনটি প্রধান ভাবে ভাগ করেছে।
প্রথম অংশ:
উসমানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ আল ফাতিহ’র আগেকার সকল সুলতানের সংক্ষিপ্ত জীবনীর উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে উঠে এসেছে। উসমান থেকে সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ পর্যন্ত সকলের বীরত্ব, ন্যায়পরায়ণতা, রাজনৈতিক কৌশল ও রাজ্য পরিচালনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
দ্বিতীয় অংশ:
মুহাম্মাদ আল ফাতিহ ও কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহ, সাহসী প্রদক্ষেপ, বীরত্ব, ন্যায়পরায়ণতা, তৎকালীন বিশ্বে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের প্রভাব এই অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তৃতীয় অংশ:
এই অংশে লেখক সংক্ষেপে ইতিহাসের বিকৃতি ও উসমানি সাম্রাজ্যের সুলতানদের সম্পর্কে লিখেছেন।
বইটি পড়া কেন প্রয়োজন-
মুসলিম উম্মার বীরত্বের সত্য ইতিহাস জানার জন্য, মহান সেই ব্যক্তিদের মত আবারো বিজয় ছিনিয়ে আনার জন্য বইটি অনেক সহায়ক হবে।
বইটির বিশেষত্ব:
অনুবাদ বই হলেও পড়তে কোনো সমস্যা হয়নি। অনুবাদ অনেক সাবলীল ও সহজবোধ্য ছিল। বইয়ের বিন্যাস, বাঁধাই, মুদ্রণ যথেষ্ট ভাল।
বইয়ের নাম: সুলতান দ্য গ্রেট মুহাম্মাদ আল ফাতিহ
লেখক: ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি
ভাষান্তর: আবদুর রশীদ তারাপশী
প্রকাশনী: কালান্তর প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্য: ৩২৫৳
প্রকাশকাল: ১ আগস্ট ২০১৯