Description
আমাদের দেশে ইসলামের প্রসার ও প্রচারে তাসাওউফপন্থি ধর্মীয় ব্যক্তিগণের ভূমিকা অনেক।
সে সুবাদে আকাবির-আসলাফের মধ্যে যাঁরা সুফিতত্ত্বের চর্চা করেছেন, তাঁরাই এতদঞ্চলে বেশি চর্চিত ও আদৃত হয়েছেন। দ্বাদশ শতকের বিখ্যাত মনীষী হুজ্জাতুল ইসলাম আবু হামিদ গাজালি রাহ. সম্ভবত এ কারণেই বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। মুসলিম দার্শনিক হিসেবে পরিচিতি ও স্বীকৃতি পাওয়ার কারণে ধর্মীয় বলয়ের বাইরেও তিনি সুপরিচিত।
গ্রন্থটিতে ইমাম গাজালির জন্মবৃত্তান্ত থেকে শুরু করে জ্ঞান অর্জনে তাঁর চেষ্টা ও অধ্যবসায়, বাগদাদের নিজামিয়ায় অধ্যাপক হিসেবে যোগদান, তাঁর উন্নতি ও খ্যাতি লাভের কারণসমূহ, তাঁর জীবনের গতিপথ বদলে দেওয়া বিপ্লব, শিক্ষকতা জীবনে প্রত্যাবর্তন, সময়কাল হিসেবে তাঁর রচনাবলির বিবরণ, বাতিনি শিয়াদের ব্যাপারে তাঁর মনোভাব, দর্শন, দার্শনিক, কালামশাস্ত্র ও তাসাওউফ সম্পর্কে তাঁর অবস্থান, তাঁর সংস্কারনীতি এবং সামাজিক ব্যাধি নিরাময়ের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
এ ছাড়াও তাঁর সংস্কার কর্মসূচির অঙ্গনসমূহ, শিক্ষা ও তারবিয়াতের জন্য তাঁর প্রণীত পাঠ্যক্রম, ইসলামি আকিদা প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রচেষ্টা, আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকারের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা, অত্যাচারী শাসকের সমালোচনা, সামাজিক ইনসাফ প্রতিষ্ঠার দাওয়াত, বিকৃত বুদ্ধিবৃত্তিক প্রবণতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ইত্যাদি বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি চিন্তার শুদ্ধিকরণে তাঁর ভূমিকা, অন্ধ অনুকরণের বিরোধিতা, কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহর প্রতি আহ্বান এবং সালাফের মানহাজ আঁকড়ে ধরার দাওয়াত নিয়ে তিনি যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, তারও বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে। ক্রুসেড সম্পর্কে তাঁর অবস্থান কী ছিল, তা নিয়েও বিস্তর আলোচনা আছে গ্রন্থটিতে।
ইমাম গাজালি সম্পর্কে জানতে বাংলাভাষী পাঠকের যে শূন্যতা ছিল, এই গ্রন্থটি সেই শূন্যতা পূরণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
MD. SAIDUL ISLAM –
পৃথিবীর ইতিহাসে ইমাম গাজালি নিজ গুণে পরিচিত অনন্য এক মানুষ৷ ইরানের তুসে তাঁর জন্ম ৪৫০ হিজরি সনে। তাঁর পিতা ছিলেন একজন দরিদ্র ও নেককার লোক। তিনি একাধারে প্রখর মেধাবী, বিচক্ষন, বিস্ময়কর বোধশক্তির অধিকারী ও দূরদর্শী ছিলেন। অল্প বয়সেই তিনি নিজামিয়া মাদ্রাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সেই সময়ে নিজামিয়ায় নিয়োগ প্রাপ্তি ছিল আলিমদের কাছে চরম কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়। কিন্তু তিনি এই অধ্যাপনার মূল উদ্দেশ্য বুঝার চেষ্টা করেন এবং তা পরকালের পথে কল্যাণ বয়ে আনছে না বলে এর থেকে দূরে সরে যান। দীর্ঘ ১০ বছর জগৎসংসার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পর আবারও অধ্যাপনার জগতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি সেলজুক আমলে সুন্নি মতবাদ প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন এবং আব্বাসি খিলাফতকে সুসংহত এবং ক্রমবর্ধমান বাতিনি ফিতনাকে প্রতিরোধের লক্ষ্যে তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ চালিয়ে যান। তিনি উম্মার শিক্ষাদীক্ষা এবং তাদের আশু বিপদ থেকে সতর্ক করার পেছনে সময় ব্যয় করেছেন। ইমাম গাজালি ৫০৫ হিজরি ইনতিকাল করেন। ইমাম গাজালির স্বরণে প্রসিদ্ধ কবি আবিওয়ারদি একটি মর্মস্পর্শী কবিতায় নিচের কথাগুলো লিখেছিলেন-
“আমাকে ব্যথার সাগরে ভাসিয়ে বিদায় হলো এক মনীষীর
যাঁর নেই কোনো স্থলাভিষিক্ত, যিনি বে-নজির।”
শ্রেষ্ঠ আলিম ও কীর্তিমান মনিষী ইমাম গাজালি’র কর্ম ও জীবন নিয়ে ইতিহাসবিদ ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি অতুলনীয় একটি বই রচনা করেন। যা তাঁর সেলজুক সাম্রাজ্য নিয়ে লিখা বইয়ের একটি অংশবিশেষ। কালান্তর প্রকাশনী থেকে বইটি “ইমাম গাজালি রহ. জীবন ও কর্ম” নামে বাংলায় অনূদিত হয়েছে। লেখক বইটিকে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বিভক্ত করে ধারাবাহিক আলোচনা করে গেছেন। প্ৰথমেই ইমাম গাজালির পারিবারিক পরিচয় ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। যেখানে ইমাম গাজালির ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে। সেই সময়ের সবচেয়ে বড় ফিতনা বাতিনি মতবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম, দর্শন ও দার্শনিকদের ব্যাপারে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে লিখক খুব ভালোভাবে তুলে ধরেছেন। সংস্কার ও ইসলামি পুনর্জাগরণে গাজালির অবদান ছিল ব্যাপক। লেখক পর্যায়ক্রমে গাজালির- সংস্কার পদ্ধতি, সংস্কারের বৈশিষ্ট্য, ইসলামি সমাজের ব্যাধি শনাক্ত করে প্রতিষেধক ব্যবস্থা করা ইত্যাদি আলোচনা করেন। গাজালি কিভাবে আলিমগণের কার্যকলাপ ও নৈতিক অবনতি, অত্যাচারী শাসক, সমাজের প্রচলিত সব বিদআত ও কুসংস্কারের সমালোচনা করতেন এসম্পর্কে বইটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ক্রুসেডার আগ্রাসনের ব্যাপারে গাজালির অবস্থান ও তাঁর গ্রন্থ নিয়ে যে আলোচনা-সমালোচনা আছে তাও সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে এই বইটিতে। সর্বপরি বইটি এমনভাবে সাজানো যে এর থেকে সকল পাঠক গাজালি সম্পর্কে অনেক অজানা সত্য তথ্য জানতে পারবেন।
বইটি পড়া কেন প্রয়োজন-
◆ সমাজ-রাষ্ট্রের সংস্কারে ইমাম গাজালি যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা আমরা আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রে প্রয়োগ করতে পারি।
◆ কিভাবে তিনি অন্যায়ের সমালোচনা করতেন তা শেখার জন্য বইটি অনেক সহায়ক হবে।
◆ তিনি তৎকালীন কিছু আলিমদের সমালোচনা করেছিলেন যা এখনো আমাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এ থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে।
◆ “দুনিয়ার সম্পদেই সাফল্য নয়”। বইটি পড়লে তা খুব ভাল ভাবেই উপলব্ধি করতে পারবেন।
ভাল-মন্দ কিছু দিক-
বইটি “সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাস” বইয়ের অংশবিশেষ। কালান্তর বইটি আলাদাভাবে প্রকাশ করেছিল। এখন “সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাস” বইটি প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে কালান্তর “ইমাম গাজালি” বইটির এই অংশ আবারও “সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাস” বইটির সাথে যুক্ত না করায় যারা আগেই বইটি কিনেছিল তাদের জন্য ভাল হয়েছে। তবে আমি মনে করি আগে প্রকাশ না করে একসাথেই প্রকাশ করাটাই ভাল হত। কিন্তু ভাল দিকটি হল যারা আগে বইটি সংগ্রহ করেনি তারা “সেলজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাস” বইটির সাথে এই বইটি বিশেষ মূল্য ছাড়ে পাবে, ফলে কোনো পক্ষেরই ক্ষতি হচ্ছেনা। প্রকাশনীর এই সিদ্ধান্তটা আমার কাছে ভাল মনে হয়েছে।
বইয়ের নাম: ইমাম গাজালি রহ. জীবন ও কর্ম
লেখক: ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি
ভাষান্তর: আবু আব্দুল্লাহ আহমদ
সম্পাদক: আবুল কালাম আজাদ
প্রকাশনী: কালান্তর প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্য: ১৮০৳
প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০২০
#কালান্তর_ওয়াফিলাইফ_রিভিউ_প্রতিযোগিতা